“যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে” একটি কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশ, যা আমাদের সমাজের জীবনীশক্তি এবং পরিবর্তনের সাথে জড়িত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা প্রকাশ করে। এখানে নদীকে একটি রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যা মানুষের জীবনের গতিশীলতা এবং প্রবাহকে নির্দেশ করে। যখন নদী হারিয়ে যায় এবং স্রোত চলে না, তখন এর অর্থ হলো জীবনের গতিশীলতা, উদ্যম এবং পরিবর্তন থমকে গেছে।
১. জীবনের প্রবাহ
নদী একটি প্রাকৃতিক প্রবাহ, যা জীবনের চলমানতার প্রতীক। জীবন চলমান, পরিবর্তনশীল এবং গতিশীল। নদীর স্রোত যেমন স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হয়, তেমনি মানুষের জীবনও চলতে থাকে। কিন্তু যখন এই প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, তখন মানুষ জীবনে স্থবিরতা অনুভব করে। অর্থাৎ, সমাজে যখন নতুন চিন্তা, উদ্ভাবন ও পরিবর্তন ঘটছে না, তখন সেই জাতি উন্নতি থেকে পিছিয়ে পড়ে।
২. অচল অবস্থার প্রভাব
কবিতার দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, “যে জাতি জীবনহারা অচল অসাড় পদে পদে বাধে তারে জীর্ণ লােকাচার।” এটি বোঝায় যে, যখন একটি জাতি বা সমাজ অচল হয়ে পড়ে, তখন তারা পুরাতন অভ্যাস, সংস্কৃতি ও চিন্তা-ভাবনায় আবদ্ধ হয়ে যায়। এই অচল অবস্থা তাদের উন্নতি ও সমৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। নতুন চিন্তা, নবনির্মাণ ও প্রগতিশীলতা হারিয়ে গেলে সমাজের ভিতরে এক ধরনের জীর্ণতা আসে, যা সামাজিক অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
৩. পুনর্জাগরণের প্রয়োজন
নদীর স্রোত পুনরায় প্রবাহিত করার জন্য যেমন বাধা অপসারণ করতে হয়, তেমনি সমাজেরও পুরাতন চিন্তা ও সংস্কৃতির বাধা দূর করতে হবে। পরিবর্তন ও নবজাগরণের মাধ্যমে মানুষের চিন্তা, মনন ও সংস্কৃতির মধ্যে নতুনত্ব আনতে হবে। একটি জাতির জন্য প্রয়োজনীয় হলো, তারা যেন অতীতের অভ্যাস থেকে বেরিয়ে এসে নতুন ধারণা ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে।
৪. সমাজের শক্তি
কবিতায় প্রকাশিত ধারণা আমাদের জানায় যে, একটি জাতি যখন জীবনীশক্তি হারায়, তখন তা কেবল তাদের নিজেদের জন্যই ক্ষতিকর নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য ক্ষতিকর। সমাজের প্রতিটি সদস্যকে সচেতন হতে হবে, পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে হবে এবং একটি শক্তিশালী ও সৃজনশীল সমাজ গঠনে সহযোগিতা করতে হবে।
উপসংহার
“যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে” একটি গভীর অর্থ বহন করে। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, পরিবর্তন এবং প্রবাহ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যখন আমরা পরিবর্তনকে গ্রহণ করি এবং নবীনতার পথে এগিয়ে যাই, তখনই আমরা আমাদের জীবনের স্রোতকে অব্যাহত রাখতে পারব। একটি জাতির জীবনীশক্তি পুনরুদ্ধার করতে হলে পুরাতন চিন্তা-ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন দিগন্তের দিকে অগ্রসর হতে হবে। এভাবেই আমরা একটি শক্তিশালী, গতিশীল এবং সৃজনশীল সমাজ গড়ে তুলতে পারব।