পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি বিশেষ অঞ্চল, যেখানে বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে। এ অঞ্চলে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা প্রভৃতি উপজাতি জনগোষ্ঠী বাস করে। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের সময়কালে এই অঞ্চলে আদিবাসী ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, আদিবাসীরা তাদের সাংস্কৃতিক ও স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানায়, যা পরে সশস্ত্র আন্দোলনে পরিণত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (PCJSS) এবং শান্তি বাহিনীর মতো গোষ্ঠী এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়। এর ফলে ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে বহু সহিংস সংঘর্ষ ঘটে।
সমস্যার মূল কারণগুলো:
- ভূমি অধিকার: উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর জমি সংক্রান্ত অধিকার লঙ্ঘন এবং বাঙালি সেটলারদের ভূমি দখল।
- রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের অভাব: উপজাতীয়দের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি।
- সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য: উপজাতি জনগোষ্ঠীর শিক্ষার সুযোগ এবং কর্মসংস্থানের সীমাবদ্ধতা।
সরকারের পদক্ষেপ:
বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা পার্বত্য অঞ্চলের সমস্যা সমাধানে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। চুক্তির প্রধান কিছু ধাপ ছিল:
- শান্তি চুক্তি (১৯৯৭): সরকারের সাথে PCJSS-এর মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার মাধ্যমে সশস্ত্র বিদ্রোহের অবসান ঘটে।
- পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন: চুক্তি অনুযায়ী আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হয়, যা স্থানীয় প্রশাসন ও উন্নয়নে উপজাতীয়দের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।
- ভূমি পুনর্বাসন ও জমি সমস্যা সমাধান: চুক্তির অধীনে জমি সমস্যা সমাধানের জন্য বিশেষ কমিশন গঠন করা হয়, তবে এই সমস্যা এখনো পুরোপুরি সমাধান হয়নি।
- উন্নয়ন প্রকল্প: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে পার্বত্য এলাকার জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
উপসংহার:
পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি সমস্যার পটভূমি জটিল এবং দীর্ঘস্থায়ী। তবে শান্তি চুক্তির মাধ্যমে একটি স্থিতিশীলতা এসেছে। যদিও এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং উন্নয়ন কার্যক্রম উপজাতি সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।