গঙ্গা-কপোতাক্ষ (GK) প্রকল্প হলো বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। কৃষিকাজে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য ১৯৫৪ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেচ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। প্রধানত খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, ও মাগুরা জেলার কৃষিজমিতে পানি সরবরাহের জন্য এই প্রকল্পটি চালু করা হয়। এর মাধ্যমে কৃষিকাজে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খরাপ্রবণ এলাকায় সেচব্যবস্থা উন্নয়ন করা। পদ্মা নদীর শাখা গঙ্গা নদী থেকে পানি সরবরাহ করে কপোতাক্ষ নদীর জলসেচের মাধ্যমে এখানে পানির অভাব দূর করার চেষ্টা করা হয়। প্রকল্পের আওতায় বিশাল এলাকাজুড়ে খাল খনন, জলাধার নির্মাণ, এবং সেচব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে, যার ফলে এই অঞ্চলের কৃষিতে বিপুল উৎপাদন বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়।
প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও ফলাফল:
গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর থেকে এ অঞ্চলে ধান, পাট, গম, ও অন্যান্য শস্যের উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে যেখানে পানির সংকট ছিল, সেখানে সেচের মাধ্যমে জমির সেচ নিশ্চিত করে শস্যের উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেচের পাশাপাশি জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং ভূমির উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
তবে প্রকল্পের কিছু সমস্যাও বিদ্যমান, যেমন পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের ঘাটতি এবং সেচব্যবস্থার আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা। সাম্প্রতিক সময়ে পদ্মা নদী থেকে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহে সমস্যা দেখা দেওয়ার ফলে এ প্রকল্পের কার্যকারিতা কিছুটা কমে এসেছে। তবুও, গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্প বাংলাদেশের সেচব্যবস্থার উন্নয়নে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।
উপসংহার:
গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্প বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষির উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। যদিও প্রকল্পের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ চলছে। দীর্ঘমেয়াদে প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করবে সেচব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের ওপর।