জুম চাষ বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে প্রচলিত এক প্রাচীন কৃষি পদ্ধতি। এটি মূলত পাহাড়ি আদিবাসীদের একটি ঐতিহ্যবাহী কৃষি কার্যক্রম, যা বাংলাদেশের বান্দরবান, রাঙামাটি, এবং খাগড়াছড়ি এলাকায় বিশেষভাবে প্রচলিত। এই কৃষি পদ্ধতি পাহাড়ি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
জুম চাষের প্রক্রিয়া:
জুম চাষের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো পাহাড়ের ঢালে বা টিলায় বন পরিষ্কার করে সেখানে ফসল চাষ করা। প্রথমে বন বা ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয় এবং পরে মাটিকে আংশিক প্রস্তুত করে বীজ বপন করা হয়। এই পদ্ধতিতে মূলত ধান, ভুট্টা, কুমড়া, তিল, এবং বিভিন্ন সবজি চাষ করা হয়। সাধারণত এক বছর পর একটি জমি ছেড়ে অন্য জমিতে চাষ করা হয়, যাতে জমি নিজে থেকে উর্বর হতে পারে।
জুম চাষের সুবিধা ও সমস্যা:
জুম চাষ পাহাড়ি এলাকার মানুষের জীবিকা নির্বাহের একটি প্রধান মাধ্যম। এটি সহজ এবং স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে মানানসই, তবে এটির কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। একদিকে, এই পদ্ধতি পাহাড়ের মাটির উর্বরতা হ্রাস করতে পারে এবং বন উজাড়ের কারণে পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও, জুম চাষে উৎপাদনশীলতা তুলনামূলকভাবে কম, যার ফলে চাষিদের আর্থিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পরিবর্তন ও আধুনিকীকরণ:
বর্তমানে বাংলাদেশের সরকার এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা পাহাড়ি এলাকার জুম চাষিদের কৃষির উন্নয়নে কাজ করছে। আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি এবং ভূমি সংরক্ষণে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিছু এলাকায় জুম চাষের পরিবর্তে রাবার ও ফলের বাগান তৈরি করা হয়েছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে।
উপসংহার:
জুম চাষ বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী কৃষি পদ্ধতি হলেও, পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এর আধুনিকীকরণ প্রয়োজন। সরকার ও স্থানীয় উদ্যোগের মাধ্যমে এই পদ্ধতির টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।