বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৭৩ সালে “বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩” প্রণয়ন করা হয়। এই আদেশের মাধ্যমে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শাসনব্যবস্থা, একাডেমিক কার্যক্রম, এবং প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা হয়।
আদেশের পটভূমি:
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়ন ও এর পরিচালনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য একটি স্বতন্ত্র আইনি কাঠামোর প্রয়োজন দেখা দেয়। এই প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ প্রণীত হয়। এর মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা করা, যাতে শিক্ষার গুণগত মান ও স্বাধীনতা বজায় থাকে।
প্রধান বৈশিষ্ট্য:
১. স্বায়ত্তশাসন: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অধিক স্বাধীনতা দেওয়ার লক্ষ্যে আদেশটি প্রণয়ন করা হয়, যাতে তারা নিজস্ব নিয়মনীতি অনুসরণ করে পরিচালিত হতে পারে।
২. অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট: প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা ও নীতিনির্ধারণী কাজের জন্য একটি সিন্ডিকেট এবং অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল গঠন করা হয়। এদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক ও শিক্ষামূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৩. শিক্ষা ও গবেষণার উন্নতি: আদেশের মাধ্যমে গবেষণা এবং শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিভিন্ন বিষয় ও ক্ষেত্রে গবেষণায় উন্নতি করতে উৎসাহ দেওয়া হয়।
৪. নিয়োগ ও প্রশাসন: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়োগ, তাদের বেতন, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে এই আদেশ নির্দেশনা প্রদান করে।
৫. ছাত্র ও শিক্ষকদের অধিকার: এই আদেশে ছাত্র ও শিক্ষকদের বিভিন্ন অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কিছু ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাতে তারা স্বাধীনভাবে একাডেমিক ও গবেষণামূলক কাজে অংশ নিতে পারে।
অবদান ও প্রভাব:
বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩ বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। এই আদেশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনায় আরও বেশি স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আদেশের কিছু অংশ সংশোধন এবং নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আরও উন্নত করা হয়েছে।
উপসংহার:
“বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩” বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার স্বাধীনতা, মান উন্নয়ন, এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর আরও উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের প্রয়োজন রয়েছে।