পানামায় মার্কিন আক্রমণ (১৯৮৯) এবং আফগানিস্তানে বায়ত (২০০১) উভয় ক্ষেত্রেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু এই দুই ঘটনায় কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে যা তাদের গুণগতভাবে আলাদা করে।
পানামায় মার্কিন আক্রমণ
- কেন্দ্রবিন্দু: পানামায় হামলার উদ্দেশ্য ছিল পানামার নেতা ম্যানুয়েল নরিয়েগার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী ছিলেন এবং মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত ছিলেন। এটি মূলত একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি ও সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ ছিল।
- জনমত: মার্কিন সরকার এই হামলাকে “অপারেশন জাস্ট কারণ” হিসেবে উল্লেখ করেছিল, এবং আক্রমণটির পক্ষে জনসমর্থন কিছুটা ছিল। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটি ব্যাপকভাবে বিতর্কিত ছিল, বিশেষ করে লাতিন আমেরিকান দেশগুলোর মধ্যে।
- পরিণতি: হামলার ফলে পানামায় কিছু পরিবর্তন আসে, যেমন নতুন সরকার গঠন এবং স্থিতিশীলতা, তবে এটি স্থায়ী রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যায়নি।
আফগানিস্তানে বায়ত
- কেন্দ্রবিন্দু: আফগানিস্তানে হামলার মূল কারণ ছিল ৯/১১ হামলার পরে আল-কায়েদার নেতৃবৃন্দকে লক্ষ্য করে তালেবান সরকারকে অপসারণ করা। এখানে একটি বৃহত্তর সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়েছিল।
- জনমত: আফগানিস্তানে হামলাকে অনেক দেশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি বৈধ প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখেছিল, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চলতে থাকায় এবং অসাধু অবস্থার কারণে বিশ্বজুড়ে জনমত বিভক্ত হতে শুরু করে।
- পরিণতি: আফগানিস্তানে সামরিক হস্তক্ষেপের ফলস্বরূপ দেশটিতে দীর্ঘকালীন যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, এবং মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়। এটি স্থায়ী রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে আরও জটিলতার সৃষ্টি করে।
বিশ্ব জনমত
- পানামা: পানামায় হামলার পর আন্তর্জাতিকভাবে জনমত বেশ বিতর্কিত ছিল, এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে স্বেচ্ছাচারিতা হিসেবে বিবেচনা করে। অনেক দেশ এতে অখুশি ছিল, যা তাদের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- আফগানিস্তান: আফগানিস্তানে হামলা অনেকাংশে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রথমদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এর সহযোগীরা আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছিল। তবে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ফলে জনমত বিভক্ত হয়ে পড়ে, এবং এর ফলস্বরূপ কিছু দেশের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনাস্থা বাড়ে।
সারসংক্ষেপ
পানামায় মার্কিন আক্রমণ এবং আফগানিস্তানে বায়ত একই রকম সামরিক হস্তক্ষেপ হলেও তাদের লক্ষ্য, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং রাজনৈতিক পরিণতির ক্ষেত্রে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। পানামায় আক্রমণ একটি নির্দিষ্ট শাসককে লক্ষ্যবস্তু করে ছিল, যেখানে আফগানিস্তানে হামলা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক যুদ্ধের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। এই দুটি ঘটনার ফলস্বরূপ বিশ্ব জনমতও আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করেছে।